স্বদেশ ডেস্ক:
আল্লাহর স্মরণ থেকে মু’মিন যখন গাফেল থাকে শয়তান তখন কলবে ঠাঁই করে নেয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিপথে পরিচালিত করে। পাপের পথে ঠেলে দেয়। তাই মু’মিনের প্রতিটি কাজ আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে শুরু করা উচিত। আল্লাহ তায়ালার নামের মাঝেই রয়েছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত। তাই তো আল্লাহর রাসূল সা: বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় একটি দোয়া করার নির্দেশ ও তাগিদ দিয়েছেন। সুন্নাহ অনুযায়ী দোয়া পড়ে বের হলে আল্লাহ তায়ালার হেফাজতে থাকা যায়। সবধরনের বিপদ-আপদ ও অসুবিধা থেকে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করেন। দোয়াটি হলো : ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ ‘অর্থাৎ আল্লাহর নামে, আল্লাহ তায়ালার ওপরই নির্ভর করলাম।’ মনে রাখতে হবে- আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ছাড়া কোনো কল্যাণ লাভ করার শক্তি কারো নেই।
আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যদি কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তায়ালাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি হেফাজত অবলম্বন করেছ (অনিষ্ট থেকে)। তাতে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। (তিরমিজি-৩৪২৬) তাওয়াক্কুল অর্থ হলো- আল্লাহর ওপর ভরসা করা। ইসলামের পরিভাষায় যেকোনো প্রয়োজন কিংবা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভর করাকে তাওয়াক্কুল বলা হয়।
তাওয়াক্কুল আলাল্লাহর অর্থ হলো : আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করা। ইসলামে আল্লাহ তায়ালার ওপর তাওয়াক্কুল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি একটি ইবাদত। তাই আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো ওপর তাওয়াক্কুল করা যায় না। গায়েবের মালিক আল্লাহ তায়ালা। জীবিত-মৃত কোনো পীর-বুজুর্গের ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা শিরক।
সূরা লুকমানে বর্ণিত হয়েছে : লুকমান তার ছেলেকে নসিহত করতে গিয়ে বলল- হে বৎস, আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করো না; (অবশ্যই) শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম। (সূরা লুকমান-১৪)
এক বর্ণনায় আছে- একজন ঈমানদার মানুষ ভালো ও কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সব ব্যাপারে নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করবে, সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে আর ফলাফলের জন্য আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করবে, তাঁর প্রতি আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে। বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন ফলাফল তা-ই হবে। আর তাতেই রয়েছে কল্যাণ। এটিই তাওয়াক্কুলের মর্ম।
তাওয়াক্কুল অবলম্বনকারী ব্যক্তি কখনো হতাশ হয় না। আশা ভঙ্গ হলে হাহুতাশ করে না। সমস্যা-সঙ্কটে ঘাবড়ে যায় না। বিপদ-মুসিবতে আল্লাহ তায়ালার ওপর দৃঢ় আস্থা রেখে সে সামনে এগিয়ে চলে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না।
তাই আল্লাহ তায়ালার ওপর তাওয়াক্কুল হলো তাওহিদের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামী পরিভাষায় তাওহিদ হলো সৃষ্টি ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা, সব ইবাদত-উপাসনা কেবল আল্লাহর জন্য করা। তার সব চাওয়া-পাওয়া আল্লাহ তায়ালার কাছেই কামনা করা। অথচ আমাদের সমাজে কিছু মানুষ চাওয়া-পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ফকির-দরবেশের দরবার ও কবর-মাজারে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এমনকি মাজারে এবং ভণ্ড পীরের পায়ে সিজদা দিয়ে পড়ে থাকতেও দেখা যায়। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করা বড় ধরনের জুলুম। এটি যে ব্যক্তি করে সে মুশরিক হয়ে যায়।
কত বড় বিপদের মধ্যে যে আমরা আছি ভাবলে অবাক হতে হয়। আমাদের দেশে কিছু নেতা-নেত্রী নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন বিভিন্ন মাজারে গিয়ে। কেউ আবার সন্তান-সম্পদ ও পদ-পদবি লাভের জন্য মাজারে গিয়ে ধরনা দেন। কবরে শায়িত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া নিঃসন্দেহে বড় ধরনের শিরক। এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের জন্য এখনই তাওবাহ করে ফিরে আসা এবং প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ মহান ও পরম দয়ালু।
আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমি সে রকমই, যে রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, তবে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই, যদি সে আমার দিকে হেঁটে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে দৌড়ে যাই।’ (বুখারি-৭৪০৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে মু’মিনরা, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সূরা বাকারাহ-১৫৩) মানুষ যখন ধৈর্যসহ আল্লাহর ওপর ভরসা করে তখন তার মাথা থেকে অনেক ভারী বোঝা সরে যায়। জগৎ-সংসারে মানুষের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে; সেসব কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে মানুষকে অনেক বিপাকে পড়তে হয়। তবে এ কথা ধ্রুব সত্য- আল্লাহ তায়ালার ওপর যারা ভরসা করে তাদের চলার পথ তিনি সহজ করে দেন।
লেখক :
সাংবাদিক